Do to others what you would have them do to you, for this sums up the Law and the Prophets. (Gospel according to Matthew 7:12)
Stand out firmly with justice as witnesses for God, even if it be against yourselves or parents and relatives, be he rich or poor. (Koran 4:135)

শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

রুশো—স্বর্গরাজ্য বনাম সামাজিক চুক্তি

জ্যাঁ জ্যাক রুশো তাঁর লেখা ‘দি সোশাল কন্ট্রাক্ট অর প্রিন্সিপলস অব পলিটিক্যাল রাইট’ নামক বইয়ের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। তিনি ব্যক্তির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে তাঁর বইতে আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে সাধারণত সেই রাষ্ট্রের জনগণের উপাস্য ঈশ্বরের ভূমিকা নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন—কারণ সাধারণত রাজা সেই ঈশ্বরের ‘অনুমোদন’কে নিজের শাসনাধিকারের উৎস হিসেবে দাবী করে থাকে এবং আইন প্রণয়নে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করে। এর বিরুদ্ধে ও বিপরীতে রুশো সামাজিক চুক্তিকে শাসনের অধিকার হিসেবে গ্রহণ করেন।

তিনি তাঁর বইয়ের চতুর্থ ভাগের অষ্টম অধ্যায়ে ‘সিভিল রিলিজিয়ন’ সম্বন্ধে বলেন, “The dogmas of civil religion ought to be few, simple, and exactly worded, without explanation or commentary. The existence of a mighty, intelligent and beneficent Divinity, possessed of foresight and providence, the life to come, the happiness of the just, the punishment of the wicked, the sanctity of the social contract and the laws: these are its positive dogmas. Its negative dogmas I confine to one, intolerance, which is a part of the cults we have rejected.”

কোরানে বিশ্বাসের বিষয়গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অত্যন্ত সরল, কাণ্ডজ্ঞান তা বুঝতে সক্ষম এবং এগুলো হয়ে আছে নৈতিক জীবনের যৌক্তিক ভিত। জীবনের সাথে সম্পর্কহীন ও দুর্বোধ্য স্কলাস্টিক ডিটেইলস, যা আমাদের আকায়েদ শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে, তা পরবর্তী কালের উদ্ভাবন। কোরানের পুরো এপ্রোচটিই চুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: অঙ্গিকার, শপথ, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি, সন্ধিপত্র প্রতিপালন বা অনুসরণ করা কোরানের নৈতিক আদর্শের একটি অন্যতম প্রধান বিষয়। এমনকি ঈশ্বরের উপাসনাকেও কোরানে একটি চুক্তি বা কাভন্যান্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লা ইকরাহা ফিদ্দীন, অর্থাৎ ধর্মে বা আনুগত্যে কোন শক্তি প্রয়োগ নেই—এই নীতি কোরানে স্পষ্ট ভাষায় বিধৃত হয়েছে।

তিনি তাঁর বইটির একই অধ্যায়ে মুহম্মদ (স) ও তাঁর উত্তরসূরি খলিফাদের শাসন সম্বন্ধে বলেন, “Mahomet held very sane views, and linked his political system well together; and, as long as the form of his government continued under the caliphs who succeeded him, that government was indeed one, and so far good.”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুহম্মদ একই সাথে ঈশ্বরের বার্তাবাহক হয়েও সামাজিক চুক্তি অনুসরণ করতে পারেন কিভাবে? কোরান ঈশ্বরের বাণী, যেখানে নৈতিক নিয়ম ছাড়াও কিছু সিভিল আইনও রয়েছে, সেখানে তিনি ঈশ্বরের রাজত্ব বা স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন সেটিই অনেকে প্রত্যাশা বা ধারণা করে বসবেন। আমরা কোরানে বিধৃত নৈতিক ও রাজনৈতিক মত এবং মদিনার সনদ পরীক্ষা করলে দেখতে পাব ইসলাম ধর্মে একই সাথে দুটিকে সমন্বিত করা হয়েছে—অর্থাৎ ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ থেকে জাত ধর্ম ও সামাজিক চুক্তি থেকে উৎপন্ন নাগরিকতা সমন্বিত হয়েছে, কোন রকম স্ববিরোধ ছাড়াই। একারণে আল্লাহর নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কাওকে তাঁর উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে যাননি।

ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রায়োগিক অর্থ হচ্ছে মানুষের উপর থেকে মানুষের প্রভুত্বের অবসান—অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তি স্বাধীন ও স্বশাসনের অধিকারী। মুসলিমরা প্রত্যেকে তাই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে এবং একই সাথে অন্যদের উপর প্রভুত্বের সকল আকাঙ্ক্ষাও পরিত্যাগ করে। ফলে সামাজিক চুক্তিই রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য প্রথম আবশ্যিকতা হিসেবে দেখা দেয়। মদিনা সনদ এই প্রয়োজনটিই পূরণ করে। কোরানে বিধৃত রাজনৈতিক আদর্শটিতে তাই ‘স্বর্গরাজ্য’ ও সামাজিক চুক্তির মধ্যে কোন বিরোধ নেই—বরং সামাজিক চুক্তিই এই ‘স্বর্গরাজ্য’র ভিত্তি। আর এটিকেই বলা হয়েছে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বা আনুগত্য বা বিচার বা নীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া—অর্থাৎ নিজ জ্ঞানমতো স্বাধীনভাবে ঈশ্বরের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে একে অপরকে বাধা দেবে না, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রেও একে অপরকে বাধা দেবে না।

নীচের চিত্রটির মাধ্যমে একটি মডেল উপস্থাপন করা গেল। মডেলটিতে যেভাবে মুসলিমদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছে, অন্যদের বেলায়ও তার অনুরূপ হবে, ধর্ম বা ভাবাদর্শ অনুসারে। সিম্প্লিসিটির উদ্দেশ্যে ছবিটি এরূপ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।



চুক্তিটি একই সাথে ধর্মনিরপেক্ষ ও সর্বধর্মসম্মত হবে—অর্থাৎ এটি সার্বজনীন মানবিক মূল্যমান ভিত্তিক হবে, যার লক্ষ্য হবে ইহলোকে মানুষের জীবন উন্নত করা ও সমাজকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়া, যুক্তি ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে।

ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা নিজ নিজ কিতাব ও চুক্তি অনুসারে নিজেদের জীবন পরিচালনা করবে ও ঈশ্বরের কাছে দায়ী থাকবে। ঈশ্বর নিরপেক্ষরা নিজ নিজ কিতাব/ভাবাদর্শ ও চুক্তি অনুসরণ করবে। রাষ্ট্র হিংসা ও অত্যাচার অবসানে সক্রিয় হবে আইনানুগভাবে। সকলেই রাষ্ট্রের কাছে দায়ী থাকবে চুক্তি অনুসারে। আর মানুষের মধ্যে মমত্ববোধের উদ্বোধনই হবে এর শিক্ষাব্যবস্থার মূলনীতি।

নাগরিক হিসেবে সকলে সমান ও পার্থক্যবিহীন হবে, একই আইন অনুসারে রাষ্ট্রের ব্যয়ভার বহন করবে, প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সকলে সমভাবে অংশ নেবে, মুসলিমরা সেই সাথে অতিরিক্ত হিসেবে যাকাত দেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন