Do to others what you would have them do to you, for this sums up the Law and the Prophets. (Gospel according to Matthew 7:12)
Stand out firmly with justice as witnesses for God, even if it be against yourselves or parents and relatives, be he rich or poor. (Koran 4:135)

শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

নারীর কোরান – ৩ (নাফসিন ওয়াহিদাতিন)

৩.১। প্রতীয়মান এই বস্তুর জগতে কিভাবে মানুষ এসেছে সেই প্রক্রিয়াটির কোন বিস্তারিত বিবরণ আমরা কোরানে পাই না। আমরা যা পাই তা হলো কনসেপচুয়াল ডেসক্রিপশন। কিন্তু এই ডেসক্রিপশন অনুসারে বাস্তবে মানুষ কিভাবে এসেছে বা এই ডেসক্রিপশন কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে তা বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। অথবা বিজ্ঞানীরা যা জানতে পারবেন তার সাথে এই ডেসক্রিপশন মেলে কিনা তা আমাদের পরীক্ষার বিষয় হতে পারে। তবে কোরানের ডেসক্রিপশন খুবই ফ্ল্যাক্সিবল বিধায় নানা রকম প্রকল্প সম্ভব।

৩.২। লিঙ্গ ও জাতি নির্বিশেষে সকল ব্যক্তিমানুষের সমমর্যাদা ও সম-অধিকারের নীতিটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহ কোরানে মানুষ সৃষ্টি সম্বন্ধে নিম্নরূপভাবে কথা বলেছেন।

(30:20) And of His signs is, that he created you of dust, then lo! ye are human beings spreading yourselves. (30:21) And of His signs is, that he created for you from yourselves pouses that ye may dwell in tranquillity with them, and He set between you affection and compassion. Verily herein are signs for a people who reflect.

(49:13) O mankind verily We! We have created you from male and female, and We have made you nations and tribes that ye might know one another. Verily the noblest of you with God is the most righteous of you; verily God is Knowing, Aware.

৩.৩। উপরের ৩০:২১ আয়াতে আল্লাহ বহুবচন ব্যবহার করে ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গী’ সৃষ্টির কথা বলেছেন। এই ‘তোমাদের’ মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়েই বিদ্যমান। এর অর্থ হচ্ছে ‘তোমাদের মধ্য থেকেই পুরুষ ও তার সঙ্গী নারী এবং নারী ও তার সঙ্গী পুরুষ’ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে নারীর উপর পুরুষের প্রাধান্য ও মর্যাদা এবং বিপরীতক্রমে পুরুষের উপর নারীর প্রাধান্য ও মর্যাদা দাবীর কোন সুযোগ কোন পক্ষই পাচ্ছে না। ৪৯:১৩ আয়াতে আল্লাহ নারী-পুরুষ ও জাতি-গোত্র ভিত্তিক অবস্থানের কারণে কারও দ্বারা অন্যের চেয়ে বেশী মর্যাদার দাবী অস্বীকৃত হয়েছে। এখানে আল্লাহ মানবজাতিকে সম্বোধন করে কথা বলছেন, নারী ও পুরুষ উভয়ই যার অন্তর্ভুক্ত। মানুষে মানুষে মর্যাদার কোন ফারাক হতে পারে কেবল আল্লাহর বিচারে এবং তিনি তা করেন মানুষের নৈতিক জীবনে উৎকর্ষতার ভিত্তিতে। মানুষ এই বিচারের সামর্থ্যও রাখে না, এখতিয়ারও রাখে না, এবং তার ভিত্তিতে ফারাক করারও প্রশ্নও আসে না।

৩.৪। মানুষের উৎপত্তির উৎসের একত্বের কথা কোরানের বলা হয়েছে ৪:১, ৭:১৮৯ ও ৬:৯৮ আয়াতে। মানবজাতি তথা সকল ব্যক্তিমানুষ—সকল নারী-পুরুষ—একটি মাত্র ‘নাফস’ বা আত্মা বা সত্তা থেকে এসেছে। প্রথম দুটি আয়াতে আরও বলা হয়েছে যে, সেই সত্তাটি থেকেই এসেছে তার সঙ্গী।

(4:1) O mankind! Be careful of your duty to your Sustainer Who created you from a single soul and from her created her mate and from them twain has spread abroad a multitude of men and women. Be careful of your duty toward God in Whom ye claim (your rights) of one another, and toward the wombs. Lo! God is an Observer over you.

(7:189) He it is who created you from a single soul, and from her made her mate that he might find tranquility in her. Then when he covers her, she carries a light burden and continues therein, then when she groweth heavy the twain call upon God their Sustainer: If You should give us a good, we will surely be among the grateful.

(6:98) And He it is Who has raised you up from a single soul, and (has given you) a habitation and a repository. We have detailed Our signs for a people who have understanding.

৩.৫। এখানে ‘নাস’ (মানবজাতি), ‘নাফসিন ওয়াহিদাতিন’ (একটি মাত্র সত্তা), ‘মিনহা’ (তা থেকে) ও ‘যাউজাহা’ (তার সঙ্গী) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে শব্দের জেন্ডার। ‘রাব্বাকুম’, ‘খালাকাকুম’ এর ‘কুম’ পুরুষবাচক সর্বনাম যা পুরুষবাচক ‘নাস’কে নির্দেশ করে। আবার ‘নাফস’ একটি স্ত্রীবাচক শব্দ। ‘মিনহা’ এর ‘হা’ স্ত্রীবাচক সর্বনাম, যা স্ত্রীবাচক ‘নাফস’কে নির্দেশ করে। কিন্তু তারপরের ‘যাউজাহা’ এর ‘যাউজা’ (সঙ্গী) পুরুষবাচক এবং ‘হা’ স্ত্রীবাচক সর্বনাম যা নির্দেশ করছে স্ত্রীবাচক ‘নাফস’কে।

৩.৬। ‘নাফস’ হচ্ছে অহং। কিন্তু এখানে অহং বা আত্মা বা আত্মসচেতন সত্তার অর্থ কী হতে পারে, যা থেকে মানবজাতির উন্মেষ হয়েছে? এখানে ‘নাফস’কে একটি লজিক্যাল ছাঁচ বা প্যাটার্ন বলা সম্ভব; প্রোগ্রামের সাথেও তা তুল্য; এটিকে মূল ব্লুপ্রিন্টও বলা যায়।

৩.৭। জেন্ডার নিরপেক্ষভাবে কথার অগ্রগমনটা এরকম: হে মানুষ (নারী+পুরুষ), আমরা তোমাদেরকে (নারী+পুরুষ) একটি মাত্র সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছি এবং সেই সত্তা থেকেই তোমাদের (নারী+পুরুষ) সঙ্গী (নারীর জন্য পুরুষ + পুরুষের জন্য নারী) সৃষ্টি করেছি। নারী ও পুরুষকে দুটি সাবসেট ধরে মানুষকে একটি সেট বলা যায় যা পূর্বোক্ত সাবসেট দুটোর সমন্বয়ে গঠিত। জেন্ডার ভিত্তিক ভাবে এখন কথাটিকে এভাবে বলা সম্ভব: হে পুরুষজাতি, আল্লাহ তোমাদেরকে ও তোমাদের সঙ্গীস্বরূপ নারীদেরকে একটি মাত্র সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন; এবং এভাবেও বলা যায়: হে নারীজাতি, আল্লাহ তোমাদেরকে ও তোমাদের সঙ্গীস্বরূপ পুরুষদেরকে একটি মাত্র সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন।

৩.৮। আমরা যদি মানুষ ও নারীকে দুটি প্লেটোনিক ইউনিভার্সাল আইডিয়া হিসেবে দেখি তবে বলা যায়, মানুষ অস্তিত্বে আসে নারী থেকে। মানবজাতির লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন এবং মানুষকে অস্তিত্বে আনার ক্ষেত্রে প্রজনন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ—এই উভয় দিক থেকে নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক; এবং একই সাথে স্বতন্ত্র ব্যক্তিমানুষ হিসেবে উভয়েই একরূপ।

৩.৮.১। আল্লাহ সুরা নিসার শুরুতে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা ও সম-অধিকারের ভিত্তি হিসেবে একই সত্ত্বা থেকে মানবজাতির উৎপত্তি ও একই যুগল থেকে সকল নারী-পুরুষের উৎপত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এটি এমন একটি কথা যা গর্বিত পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মনোভঙ্গির মূলে আঘাত করে। শুধু তাই নয় এর পর আল্লাহ আরও বলেছেন যে, আল্লাহ সম্বন্ধে সচেতন থাক এবং গর্ভসমূহ সম্বন্ধে। পুরুষরা আল্লাহর দোহাই দিয়েই এযাবৎকাল নারীকে অপমান ও তুচ্ছজ্ঞান করে এসেছে এবং করে চলেছে। তারা তাদের আধিপত্যের অধিকারকে আল্লাহর দোহাই দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করে এসেছে। তাদের কাছে সম্পর্কের ভিত্তি ছিল ও আছে ঔরস; নারীকে তারা সন্তান উৎপাদনের জীবন্ত যন্ত্র হিসেবে দেখেছে। কিন্তু আল্লাহ বলছেন গর্ভের কথা, এবং এই নতুন ভঙ্গিকে অবলম্বন করে তাঁর সম্বন্ধে নতুনভাবে সচেতন/সাবধান হতে ও থাকতে।

৩.৯। লক্ষণীয় বিষয়

কোরানে মানবজাতির উৎপত্তির উৎসটিকে ‘নাফসিন ওয়াহিদাতিন’ (একটি মাত্র নাফস) বলা হয়েছে। তিন তিনটি আয়াতে এই বিষয়ে কথা বলা হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘নাফসিন ওয়াহিদাতিন’ বলা হয়েছে। কোরানের কোথাও এই বিষয়ে ‘পুরুষ’ বা ‘আদম’ শব্দ ব্যবহৃত হয়নি। ‘মানুষকে একটি মাত্র পুরুষ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ও তা থেকে নারীকে (বা সঙ্গীকে) সৃষ্টি করা হয়েছে’ অথবা ‘মানুষকে আদম থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ও তা থেকে ঈভকে (বা সঙ্গীকে) সৃষ্টি করা হয়েছে’—এই কথা কোরানের কোথাও পাওয়া যায় না। ‘পুরুষ’ বা ‘আদম’ এর বদলে তিনটি আয়াতেই ‘নাফস’ শব্দটি ব্যবহারের কারণে পুরুষের পক্ষে জেন্ডার ভিত্তিক প্রাধান্য দাবীর কোন সুযোগ হচ্ছে না।

৩:১০। নীচে ৪:১, ৭:১৮৯ ও ৬:৯৮—এই তিনটি আয়াতে মানবজাতির উৎস সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা পাশাপাশি ছকাকারে দেয়া হলো। এখানে ‘খালাকা’, ‘আনশাআ’, ‘জাআলা’ শব্দগত ভ্যারিয়েশন থাকলেও ‘নাফসিন ওয়াহিদাতিন’-এ কোন ভ্যারিয়েশন নেই। তার নীচে ৪:১ আয়াতে বর্ণিত ডেস্ক্রিপশনটির (O mankind!… created you from a single soul and from her created her mate and from them twain has spread abroad a multitude of men and women) একটি ইলাস্ট্রেশন দেয়া হল।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন