Do to others what you would have them do to you, for this sums up the Law and the Prophets. (Gospel according to Matthew 7:12)
Stand out firmly with justice as witnesses for God, even if it be against yourselves or parents and relatives, be he rich or poor. (Koran 4:135)

শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

বিমান চলাচলে নেক্সটজেন টেকনোলজি – ১/৩ (প্রাথমিক কথা)

বিমান চলাচলে নানারকম কমিউনিকেশন, ন্যাভিগেশন ও সার্ভিল্যান্স প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে এই প্রযুক্তির অঙ্গনে বিশাল অগ্রগতি সাধিত হলেও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিমান চলাচলের বাস্তব ক্ষেত্রে সেই অনুপাতে উন্নত প্রযুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। এর কারণ হলো সমগ্র বিশ্বে বিমান চলাচলে এক ধরণের সমরূপতা প্রয়োজন হয়; সকল দেশের জন্য একই স্ট্যান্ডার্ড, স্পেসিফিকেশন, প্রটোকল ও অপারেশনাল প্রসেডিওর ছাড়া এক্ষেত্রে সমন্বিত কর্মকাণ্ড সম্ভব হয় না। আবার সমন্বয়ের অভাবে সংশ্লিষ্ট মানব সম্পদের প্রশিক্ষণে জটিলতা বাড়ে এবং বিমান চলাচলের নিরাপত্তায় হুমকি বাড়ে।

২। বিমান চলাচলে ট্র্যাডিশনাল কমিউনিকেশন সিস্টেমসমূহ এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সার্ভিসের প্রসেডিওরসমূহ প্রচলনকালে অর্জিত সকল প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। তখনকার বিচারে তা ছিল আধুনিক। কিন্তু তা সমগ্র বিশ্বের দেশগুলোকে এমন একটি পরস্পর নির্ভরশীল অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে যে, এখন সমন্বয়টি বজায় রেখে হুট করে তা বদলে ফেলা সম্ভব নয়। এতদুদ্দেশ্যে প্রয়োজন নতুন প্রবর্তনযোগ্য প্রযুক্তিরর সম্ভাবনা খুঁজে বের করা, প্রয়োজনীয় স্ট্যান্ডার্ড ও স্পেসিফিকেশন প্রণয়ন করা, সকল দেশের মধ্যে নতুন প্রযুক্তির জ্ঞান ট্রান্সফার করা ও সকলের মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে তা বাস্তবায়ন করা। বলাই বাহুল্য, একাজ বেশ কঠিন, আড়ম্বরপূর্ণ এবং সময় ও অর্থ সাপেক্ষ।

৩। এয়ার ট্রাফিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রধান ট্র্যাডিশনাল প্রযুক্তিগুলো হচ্ছে মেসেজ সুইচিং, টেলিফোনি, ভয়েস রেডিও ট্রান্সমিশন, ভূমিতে স্থাপিত রেডিও সিগনাল ট্রান্সমিশন ভিত্তিক ন্যাভিগেশন সিস্টেম এবং রাডার। এগুলোর জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন টেকনিক এবং এরা আলাদা আলাদাভাবে স্ট্যান্ড এলোন সিস্টেম হিসেবে সার্ভিস দিয়ে আসছে; যেখানে একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার সার্ভিসগুলোকে ব্যবহার করেন ও পূর্বনির্ধারিত প্রসেডিওর অনুসারে কাজ করেন।

৪। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের কালে সবচে বড় অগ্রগতি এসেছে কম্পিউটারের ক্ষমতা, কম্পিউটারে ব্যবহৃত কমিউনিকেশন প্রটোকলের ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচারে প্রাপ্তব্য সম্প্রসারণশীলতা, নানাবিধ এপ্লিকেশন চালনায় একই কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সক্ষমতার মধ্য দিয়ে। তাছাড়া ন্যাভিগেশনের ক্ষেত্রে জিপিএস, গ্লোনাসের মত স্যাটেলাইট সিস্টেম ভূমি ভিত্তিক সকল ন্যাভিগেশন সিস্টেমকে অনাবশ্যক ও অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে।

৫। আকাশে পাইলট তার এয়ারক্রাফট চালান বটে, কিন্তু সকল এয়ারক্রাফটের চলাচল ভূমি থেকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যিনি এই নিয়ন্ত্রণকাজ করেন তাকে বলা হয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার। এরূপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে কোন সিভিল এয়ারক্রাফট সাধারণত চলাচল করে না। এই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য তিনটি: সকল এয়ারক্রাফটের নির্বিঘ্ন চলাচল, নিরাপদ চলাচল ও দক্ষতাসম্পন্ন চলাচল।

৫.১। নির্বিঘ্ন চলাচল

নির্বিঘ্ন চলাচল বলতে বুঝায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে বিমানের উড্ডয়ন, গমন ও অবতরণ। আকাশে এয়ারক্রাফট প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তার ও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে। কিন্তু এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি হলে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স বা ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স বিলম্বিত হতে পারে এবং এরূপ ঘটলে আমরা বলতে পারি এয়ার ট্রাফিক বিঘ্নিত হয়েছে।

৫.২। নিরাপদ চলাচল

নিরাপদ চলাচলের জন্য ট্রাফিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আকাশ উন্মুক্ত হলেও এয়ারক্রাফটের জন্য পথ কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত। কাজেই পথের সংখ্যা, পূর্বাপর এয়ারক্রাফটের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব ও বিমানের গতি এই প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ব্যবহৃত প্রযুক্তির সামর্থ্য, একিউরেসি ও নির্ভরযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে নিরাপদ ব্যবধানের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

৫.৩। বিমান চলাচলে দক্ষতা

অন্যদিকে, ট্রাফিক প্রবাহে দক্ষতা বা এফিশিয়েন্সি বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ এয়ারক্রাফট প্রবাহিত করা যায়; ট্রাফিক সংখ্যা যত বেশী হবে এফিশিয়েন্সি তত বেশী হবে। বিমান পথের সংখ্যা বাড়াতে পারলে অথবা/এবং নিরাপদ ব্যবধান কমাতে পারলে দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব। আবার, বিমান চলাচলে ফ্লাইট ট্র্যাজেকটরি, ওভারহেড হোল্ডিং, ফ্লাইট ডিউরেশন, ফুয়েল কন্সাম্পশন ইত্যাদি কমিয়ে আনতে পারলে অর্থনৈতিক দিক থেকেও এফিশিয়েন্সি বাড়ে। ফুয়েল কন্সাম্পশন কমাতে পারা পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হয়।

৬। আমাদের এই আকাশে উড়তে পারা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তি ও মানুষের নৈপুণ্যের ফসল হিসেবে। বিগত আশির দশকে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (ICAO) নেতৃত্বে, ফিউচার এয়ার ন্যাভিগেশন সিস্টেম (FANS) – এই কন্সেপ্টের আওতায় নতুন কমিউনিকেশন, ন্যাভিগেশন ও সার্ভিল্যান্স টেকনোলজির সম্ভাব্য উপাদানগুলো, যা এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে ব্যবহার করা সম্ভব, খুঁজে বের করা হয়। একে অনেকেই বলে থাকেন বিমান চলাচলে নেক্সট জেনারেশন টেকনোলজি। দু-দুটো FANS কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর, ICAO একুশ শতকের সম্ভাব্য নতুন সিস্টেমগুলোর জন্য যথারীতি স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন করে এবং বিশ্বব্যাপী সমন্বিত প্রয়োগের উদ্দেশ্যে একটি বিশাল প্রোগ্রাম শুরু করে। বর্তমানে আমরা একটি ট্রানজিশন দশায় আছি বলা যায়। উন্নত বিশ্বে এর প্রয়োগ অনেকটাই হয়েছে, অনুন্নত বিশ্বেও এর প্রয়োগ বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে জোরেশোরে। অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী এর পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এই অগ্রসর প্রকৌশল ও প্রযুক্তিকে অবলম্বন করে বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায়ও আসছে বিরাট বিপ্লব। ICAO দুটি অঙ্গনে বিভক্ত করেছে এই ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির বাস্তবায়ন ক্ষেত্রকে। অনুচ্ছেদ ৭ ও ৮ এ তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

৭। এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (ATM)

৭.১। এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বলতে প্রধানত বুঝায় এয়ারস্পেস ব্যবস্থাপনা, এয়ার ট্রাফিক প্রবাহ ও এয়ারস্পেস ক্যাপাসিটির ব্যবস্থাপনা এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে। আকাশে এয়ারক্রাফট প্রবাহে দক্ষতা বাড়ানো এবং সেই সাথে তাদের মধ্যে নিরাপদ ব্যবধান বজায় রাখাই ATM এর উদ্দেশ্য। এই জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রসেস, প্রসেডিওর ও রিসোর্স ATM এর উপাদান। আগেই বলা হয়েছে, আকাশ উন্মুক্ত হলেও এয়ারক্রাফট চলাচল করে পূর্বনির্ধারিত পথে। অন্যদিকে, আকাশ পথে যাত্রী ও পণ্যের পরিবহন দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এতে বাড়াতে হচ্ছে বিমানবন্দর ও ফ্লাইটের সংখ্যা। কিন্তু এয়ারস্পেস তো আমাদের যা আছে তা-ই – এতে তো আর বৃদ্ধি ঘটছে না। কাজেই এয়ার রুট ও এয়ারস্পেস ম্যানেজমেন্ট ক্রমাগতভাবে উন্নত না করে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে পারব না; একই সাথে ট্রাফিক প্রবাহ এবং এয়ারস্পেস ক্যাপাসিটিও ক্রমাগত বাড়াতে হবে।

৭.২। নিরাপত্তার জন্য বিমান চলাচল ভূমি থেকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্বভাবতই এই উদ্দেশ্যে একটি এরিয়ার জন্য কেবল একজন কন্ট্রোলার থাকেন ও তিনি তার এরিয়ার সকল বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। এই নিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে চলাচলরত এয়ারক্রাফটসমূহের পূর্বনির্ধারিত ন্যূনতম নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। এই ন্যূনতম নিরাপদ দূরত্বকে বলা হয় সেপারেশন মিনিমা। কাজেই সেপারেশন মিনিমা যেন লঙ্ঘিত না হয় সেজন্য আকাশে এয়ারক্রফটসমূহের মধ্যে অগ্র-পশ্চাৎ ব্যবধান, উল্লম্ব ব্যবধান ও আনুভূমিক ব্যবধান যথাযথভাবে বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রসেডিওর ATC তথা ATM এর অন্যতম প্রায়োগিক উপাদান।

৮। কমিউনিকেশন, ন্যাভিগেশন, সার্ভিল্যান্স (CNS)

৮.১। এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বা ব্যবস্থাপনায় যে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ব্যবহৃত হয় তাকে প্রয়োগের ধরণ অনুসারে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে: কমিউনিকেশন, ন্যাভিগেশন ও সার্ভিল্যান্স; একে সংক্ষেপে বলা হয় CNS। এই CNS অবকাঠামো নির্মিত হয় রেডিও ওয়েভ, কমিউনিকেশন ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল ও প্রযুক্তি দ্বারা। নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও সুদক্ষ বিমান চলাচল নিশ্চিত করতে হলে পাইলট ও কন্ট্রোলারের মধ্যে বা এক কন্ট্রোল স্টেশনের সাথে অন্য কন্ট্রোল স্টেশনের সময়োচিত যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। আকাশে বিমান পথ নির্ধারিত করা এবং পাইলটের উদ্দেশ্যে ন্যাভিগেশন গাইডেন্স প্রদান করার জন্য নানাবিধ রেডিও ন্যাভিগেশন সিস্টেম স্থাপন করা প্রয়োজন হয়। তদুপরি, বিমানের নিরাপত্তার জন্য কন্ট্রোলারের প্রয়োজন হয় এমন সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, যার মাধ্যমে তিনি তার কন্ট্রোল এরিয়ায় চলাচলরত এয়ারক্রাফটসমূহের প্রাত্যক্ষণিক অবস্থানের বাস্তব ট্রাফিক ম্যাপ ডিসপ্লে দেখতে পান।

৮.২। এয়ারস্পেসের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হলে সেপারেশন মিনিমা কমিয়ে আনতে হবে। সেপারেশন মিনিমা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর অর্থই হলো ATM-এ বিপ্লব ঘটানো। বলাই বাহুল্য, CNS-এ প্রভূত উন্নতি ছাড়া ATM-এ বিপ্লব আনা সম্ভব নয়। আর একারণেই আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে বিমান চলাচলে নেক্সট জেনারেশন টেকনোলজির দ্রুত বাস্তবায়ন।

চলবে…

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন