Do to others what you would have them do to you, for this sums up the Law and the Prophets. (Gospel according to Matthew 7:12)
Stand out firmly with justice as witnesses for God, even if it be against yourselves or parents and relatives, be he rich or poor. (Koran 4:135)

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

সিরাজুদ্দৌলা বনাম মীরজাফর

অতীতের সাথে আমাদের বুদ্ধিসম্মত, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর সম্পর্কের রূপ কী হতে পারে? এটি যেমন একটি বিচার্য বিষয়, তেমনই আমরা প্রকৃত প্রস্তাবে অতীতের সাথে নিজেদেরকে কিভাবে বেঁধে রেখেছি তার প্রকৃতিও বুঝা প্রয়োজন। এ প্রয়োজন আমাদের নিজেদের জন্য, বর্তমানের জন্য এবং ভবিষ্যতের জন্য। অতীতে মহাপুরুষরা যেমন ছিলেন তেমনই ছিলেন হীনপুরুষেরা। আমরা আতীতের এই দুই ক্যাটাগরীর সাথে নিজেদেরকে সম্পর্কিত করি দুই ভিন্ন মনোভঙ্গি নিয়ে। এক শ্রেণীকে আমরা ভক্তি করি ও আরেক শ্রেণীকে আমরা করি ঘৃণা। একশ্রেণীর বন্দনায় আমরা ব্যস্ত ও অন্যটিকে সদাই দিয়ে চলেছি গালাগাল।

আমরা যারা বেঁচে আছি তারাই এখন বর্তমান, অস্তিত্বশীল। আমাদের জীবন আমাদের, আমাদের দায়ভার আমাদের, আমাদের কর্মের ফল আমাদের। আমাদের আগে আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা ছিলেন। তারা এখন অতীত। তারা জীবনের মঞ্চ ছেড়ে চলে গেছেন কর্মের ফল নিজেদের গলায় ঝুলিয়ে। তারা কেউ আমাদেরকে সম্পন্ন করতে পারবে না, তারা কেউ আমাদেরকে বিপন্ন করতে পারবে না। আমাদের সম্পদ আমাদের বিপদ আমাদের হাতেই নিহিত। আমাদের কর্মের ফল আমাদের গলাতেই ঝুলবে।

দুই ক্যাটাগরিকে নিয়েই আমরা ভুল করে বসে আছি; কিন্তু কোথায় যে ভুলটা, তা চট করে বুঝতে পারি না। দুই ক্ষেত্রেই আমরা করে চলেছি অবিচার ও অন্যায়। আমাদের করার কথা ছিল মহাপুরুষদের পথটি অনুসরণ, তাঁরা যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু সে পথ অনুসরণ করা যে বড় কঠিন কর্ম, বরং পথিক-ভক্তি এবং পথ-বন্দনার পথ যে বড় সহজ।

এখানে অত্যাচারটি হলো খোদ নিজের উপর, নিজেকে ছোট করে বড় হওয়ার পথটিকে বন্ধ করে দিলাম যে চিরতরে, অথবা নিজ ধারণামত একটি সীমা টেনে অনন্ত সম্ভাবনাটির টুঁটি চেপে ধরলাম। অন্যদিকে, জীবন তো থেমে থাকে না, কোন না কোন পথে তো চলতেই হয়। মহাপুরুষদের পথ পরিহার করলে যা অনিবার্য হয়ে ওঠে তা হলো অত্যাচারীদের পথ ধরা। ফলাফল: মহাপুরুষদের মাথায় নিয়ে অত্যাচারীদের পথে যাত্রা—এখানে দুদিকেই সুবিধা: বোঝার ওজনও কম, পথের কঠিনতাও কম।

আবার দেখুন, অতীতের অত্যাচারীরা আমাদের কী ক্ষতি করেছে যে তাদেরকে গালাগাল দিয়ে বেড়াবো আমরা? আমরা যে অবস্থায় জন্ম নিয়েছি তা-ই আমাদের যাত্রাস্থল। অতীতের অত্যাচারীরা অত্যাচার না করলে আমরা সুখে থাকতাম—এই আক্ষেপ আর আক্ষেপের জ্বালার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। এ হলো উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য সম্ভাব্য ধনে সুখে থাকতে না পারা ও বাহাদুরী দেখাতে না পারার আক্ষেপ। বাজে ভাবে বললে, এ হলো পরের ধনে পোদ্দারী করার সুযোগ হারানোর আক্ষেপ।

যদি মনে করি যে, অতীতের দুর্জনেরা হালের দুর্জনদের বীজ বুনে গেছে, তাহলেও তো কথা একই হয়। যারা আমার চারপাশে বিদ্যমান আছে সমস্যাটি তাদের সাথে, মৃতদেরকে গাল দেয়ার ছুতা খুঁজে বের করা তো বাবুরাম সাপুড়ের ঝুলি খুঁজে বেড়ানোর মত।

আমরা যে কাজটি করি তা হলো অতীতের অত্যাচারীদের কষে গালাগাল করা, আর বাস্তবে অত্যাচারের পথে চলা ও বাস্তব অত্যাচারীদের পক্ষ নেয়া। এখানে উভয় ক্ষেত্রেই আমরা দুটো অন্যায় করি। অতীতের মৃত অত্যাচারীরা যারা বতর্মান আমাদের উপর কোন অত্যাচার করেনি তাদেরকে গালি দেয়া, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অত্যাচারর পথ অবলম্বন করে বর্তমান মানুষের জীবন অতীষ্ঠ করে তোলা।

মীরজাফরকে গালি দিলেই তো আর মোহনলাল হওয়া যায় না। সিরাজুদ্দৌলাকে ভক্তি করলেই তো আর রবার্ট ক্লাইভ চলে যায় না, স্বাধীনতা ফিরে আসে না। ফ্যারওকে গালি দিয়ে লাভ কী? এতে তো আমি হারুন হয়ে যাব না। মুসাকে ভক্তি করেই বা লাভ কী, যদি আমি হামান, কারুন হই। আর যদি আমি হারুন হতে পারি বা হতে পারি মোহনলাল, বা তাঁদের ছাড়িয়ে যেতে পারি তবে ভক্তির অভাবে আমি হারাবোটা কী?

অতীতের একাংশকে সেজদা করা ও অপর অংশকে দোর্রা মারাই যেন আমাদের ধর্ম। আমরা অন্তত চতুর নাকি নিতান্তই নির্বোধ? সব ভুলে টাইম মেশিনে করে পিরামিডের দেশে বা পলাশীর প্রান্তরে গিয়ে পড়লে আমরা কে যে কোন পক্ষ নিতাম কে জানে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন