Do to others what you would have them do to you, for this sums up the Law and the Prophets. (Gospel according to Matthew 7:12)
Stand out firmly with justice as witnesses for God, even if it be against yourselves or parents and relatives, be he rich or poor. (Koran 4:135)

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

এথিকস ও অ্যাক্রোবেটিকস

একজন দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে শিখলেন। এতে কি একথা বলা যায় যে, তিনি নৈতিকভাবে উন্নত হলেন? একথার উত্তরে সবাই ‘না’ বলবেন। যিনি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার নৈপুণ্যে সর্বকালের সকল মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে মানুষের কাছে স্বীকৃত হলেন ও সম্মাননা পেলেন, তিনি জীবনের সফলতার পথে কিছু এগিয়ে গেলেন—একথা কি বলা যায়? সম্ভবত এখানে বিতর্ক এড়ানো কঠিন। আমাদের সমস্যাটি ঠিক এখানটায়, আর পাঠক নিজে এর বিচার করে দেখবেন।

অ্যাক্রোবেটিক নৈপুণ্য আকার ও বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই তা দেখা যায় ও সহজে পরিমাপ করা যায়। একারণে এগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে ও পুরস্কার দেয়ার জন্য বাছাই করা যায়। কিন্তু মানুষের নৈতিক অবস্থা নৈর্ব্যক্তিকভাবে (অবজেকটিভলি) পরিমাপ করা যায় না।

অ্যাক্রোবেটিকসের সাথে অধিকাংশ মানুষের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ নয় ও অনিবার্যও নয়। তারা নিজেরা এতে অংশ নেন না, কেবল দূর থেকে দেখেন মাত্র, তাও আবার সকলে নন। অর্থাৎ এর মধ্যে সার্বজনীনতাও নেই। অন্যদিকে নৈতিকতার প্রশ্নটি প্রতিটি মানুষের নিজের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে এবং যার ধারণা বা সম্বিত দার্শনিক থেকে শিক্ষাবঞ্চিত জন অবধি সবার মধ্যেই বিদ্যমান। নৈতিকতার মূল্যটিও সকলে উপলব্ধি করেন—তা তিনি নৈতিক বা অনৈতিক যে জীবনই বাস্তবে যাপন করেন না কেন।

মানুষের কাজ বা সামর্থ্য মূল্যায়নের দুটি পরিমণ্ডল রয়েছে: নৈতিক ও নান্দনিক।

নৈতিকতার সম্পর্ক মানুষের অস্তিত্বের সংকটের সাথে, মানুষের জীবনের দুঃখের বা যন্ত্রণার সাথে। (স্বাচ্ছন্দ্য আমরা চাই কিন্তু ওটা আসলে দুঃখের অভাব বা যন্ত্রণার অবসান।) অস্তিত্বের সংকটজাত কর্মকাণ্ডের তিনটি মণ্ডল আছে: একটি হলো ‘উৎপাদন’, আর একটি ‘ব্যবস্থাপনা’ ও অন্যটি ‘শিক্ষা’। যে কৃষকটি নিষ্ঠার সাথে আবাদ করেন, যে শ্রমিকটি নিষ্ঠার সাথে কারখানায় কাজ করেন, যে ব্যবসায়ী নিষ্ঠার সাথে পণ্য ভোক্তার হাতে তুলে দেন, যে কর্মচারী নিষ্ঠার সাথে অফিসে কাজ করেন বা যে শিক্ষক নিষ্ঠার সাথে ছাত্রদের শিক্ষা দেন তারা সবাই নৈতিকভাবে উন্নত, যে কথা নিষ্ঠাবান দড়িওয়ালা অ্যাক্রোবেটের বেলায় খাটে না।

নান্দনিকতার অবস্থান কোথায়? এর মূল্য কী বা কতটুকু? নান্দনিকতা অবশ্যই সুপারফ্লুয়াস এবং এর বিস্তৃতি বিষয়ী গত। এর সম্পর্ক আনন্দের সাথে, অনুভবের সাথে। চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে বা শিক্ষার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা আছে বটে, কিন্তু এর বাহনগুলো অ্যাক্রোবেটিক নিপুণতা ছাড়া কিছু নয়। সংগীত, অভিনয়, কাব্য, চিত্রশিল্প বা ভাস্কর্য—এসকল বিষয়ে যে নিপুণতা প্রয়োজন তা একধরনের অ্যাক্রোবেটিক বা জিমনাস্টিক অর্জন। শিক্ষা বা নব চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে এ বাহনটি প্রয়োগের বিষয়ে একথা সত্য যে, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং নৈতিকতার বিকাশে খরচ/অর্জন বা সামাজিক বিস্তৃতির দিক থেকে কার্যকর নয়; এখানে অপচয় বা ‘সিস্টেম-লস’ বেশী। আমরা দেখতে পাই যে, শ্রেণী বৈষম্য, পুঁজি, বিলাস, উদ্বৃত্ত মূল্যের সাথেই এটি অনুষঙ্গী হয়ে আছে, নৈতিকতার সাথে নয়।

কিন্তু যদি ধরেও নেই এসবের সুফল আছে, তবুও মূল্যের পিরামিডে এর অবস্থান কী হতে পারে? মানুষের জীবনে কার অবদান বেশী? কৃষক, শ্রমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের? নাকি অভিনেতা, কবি বা ভাস্করের? কৃষককে আমরা কতটুকু সম্মান করি বা তার খবরইবা কতটুকু রাখি? আর কাদেরকে আমরা ‘আইকন’ বানিয়ে তাদের জন্য অস্থির হয়ে থাকি?

এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে মানুষ সত্যিকার অর্থে কিসের উপাসনা করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন