Do to others what you would have them do to you, for this sums up the Law and the Prophets. (Gospel according to Matthew 7:12)
Stand out firmly with justice as witnesses for God, even if it be against yourselves or parents and relatives, be he rich or poor. (Koran 4:135)

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এবং এম.আই.বি

আমাদের আব্দুল্লাহর মুখ দেখে আজ বুঝার উপায় নেই যে অহিফেনের সাথে তার কোন কালে কোন সম্পর্ক ছিল। ফুরফুরা মেজাজ দেখে অবাক হয়ে তত্ত্ব-তালাশ করতে লেগে গেলাম, ব্যাপার কী আব্দুল্লাহ, বউ-মেয়ে নিয়ে কেমন আছ? আমার মতোই আমাদের আব্দুল্লাহর একটি মাত্র বউ এবং একটি মাত্র সন্তান। প্রশ্নের ধারে-কাছে না গিয়ে সে কেতাবি ঢংয়ে শুরু করে দিল, দাদা! কাজের মানুষের যখন কাজ থাকে না তখন সে অকাজ করে বেড়ায়। আর আমার মতো অকাজের মানুষের যখন কাজ করার সখ হয় তখন সে টেলিভিশন নামের বাক্সটির রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে শয্যাশায়ী হয়। ইদানীং আমি এই যাদুর বাক্সতে কি হয় না হয় তা নিয়ে বেশ বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছি। আবার, জানেনই তো, মানুষ যখন তেলের অভাবে চলার শক্তি হারায়, বলার শক্তি হারায়, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মুরদ হারায়, তখন সে আঁতেল হয়। বিতরণেই জ্ঞানের সার্থকতা - তা আপনার মতো আঁতেল মাত্রই জানেন। তাই না, দাদা!

বাক্স নিয়ে গবেষণা করে আব্দুল্লাহ যে একটা মজার কিছু আবিষ্কার করেছে তা বুঝতে পারলাম। এই বাক্স ও বাক্সের তাসির নিয়ে আমারও কৌতূহল কম নয়। আমাদের কালের গণ-দাস-মন তৈরিতে এটি যে ফ্যারওয়ের আমলের যাদুকরদের মতই যাদুকরী তা অনেকেরই অলক্ষ্যে থেকে যায়। আব্দুল্লাহ নিজেই কথা পাড়ে ও বলে। এটা তার স্বভাব। সে ভণিতাসহ কথা পাড়ল, দাদা! আজ আমি দুইটা মুভি ও দুইটা সিরিয়ালের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তা বেশ তো, বলে আমি কান খাড়া রেখে বইতে মন দিলাম। কেন জানি না আজ তার কথা শুনতে আমার ভাল লাগছিল না।
দাদা, ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ নামটির সাথে আপনার পরিচয় তো অনেক কালের। আব্দুল্লাহর কথায় আমার মেরি শেলী’র নামটি মনে পড়ে গেল। তার লেখা বই ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, অর দি মডার্ন প্রমিথিউস’। এ বইয়ের কাহিনী নিয়ে নানা সময়ে তৈরি চলচ্চিত্রগুলো নামটির বিস্তারে বেশী সহায়ক হয়েছে। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন একজন ডাক্তার ও বিজ্ঞানী। কবর খুড়ে খুড়ে সে মৃতদের নানা অঙ্গ যোগাড় করত। এবং ল্যাবরেটরিতে সেসব একসাথে জুড়ে দিয়ে সে তৈরি করতে চেয়েছিল তার আদর্শ মানব। এই মানব নড়েচড়ে উঠলে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে চিৎকার করেছিলেন ‘ইটস এলাইভ’ বলে। কিন্তু সৃষ্টি তার হয়ে উঠেছিল এক মনস্টার; যে শেষে তার স্রষ্টা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকেই হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। কাহিনীর একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের একটি নাম আছে, পরিচয় আছে; কিন্তু তার সৃষ্টির কোন নাম নেই - সে কেবলই ‘দি মনস্টার’।
১৭৯৭ সালে লন্ডনে জন্ম নেয়া মেরির জন্মের আগেই ফরাসি বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। আর ইংল্যান্ডে তখন চলছে শিল্প বিপ্লবের ধুমধাম। একের পর এক বিশাল বিশাল সব বিজ্ঞানী আর চোখ ধাঁধানো সব উদ্ভাবকের মধ্যে যেন একটা মার মার কাট কাট রবে প্রতিযোগিতা চলছে। মানুষ সরে যাচ্ছে একে অপর থেকে। আর, সবচে বড় কথা, প্রকৃতি থেকে। কৃত্রিম পরিবেশে কৃত্রিম মানুষের আগমনের আশংকায় শঙ্কিত হয়ে উঠছে তখনকার রোমান্টিকতাবাদীরা। এ রকম একটি সময়ে জন্মানো মেরি তার স্বামী কবি শেলী, স্বামীর বন্ধু কবি বায়রন এবং তাদের সমকালীন কবি কোলরিজ ও কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের রোমান্টিসিজম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছিলেন। এসময়ের পটভূমিতে ভবিষ্যতের আশঙ্কার চিত্র তুলে ধরতে চাইলেন মেরি তার লেখা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ বইতে একটি অনবদ্য কাহিনীর মধ্য দিয়ে।
আমার মুখের দিকে চেয়ে এ নিয়ে পাণ্ডিত্য দেখানোর চেষ্টা করাটা সুবিধেজনক হবে না বুঝতে পেরে আব্দুল্লাহ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ছেড়ে সোজা অন্যগুলো নিয়ে পড়ল। দাদা, ‘মেন ইন ব্ল্যাক’ বা এম.আই.বি হচ্ছে হাল জমানার হিরো ছেলেপুলেদের কাছে একটি প্রিয় ছবি। খালি কি তাই? এম.আই.বি’রা তাদের কেতা ও ফ্যাশনেরও আদর্শ। এই এজেন্টরা একেবারে যাকে বলে মহাজাগতিক রক্ষী। তারা স্বরাজের বাসিন্দা। আপনার আমার কথা তাদের কাছে কেবলই ক্যারিক্যাচার। এখানে দেখি আরেক যুদ্ধ। দুষ্টদের হাত থেকে মহাবিশ্বকে রক্ষা করার মিশন নিয়ে নিবেদিতপ্রাণ তারা কত কী যে করে যায়, দাদা, দেখলে তাজ্জব হতে হয়। আপনি যা-ই দেখেন, যা-ই শোনেন তা ভুলিয়ে দেয়ার আলকেমিও তাদের দখলে।
সনি টিভিতে দুটো সিরিয়াল একবারও মিস না করে নিয়মিত দেখেই চলেছি। ঘড়ি ধরে অপেক্ষা। একটা ‘সি.আই.ডি’ আরেকটা ‘আদালত’। আমি প্রসন্নভাগ্য, দাদা, মেয়েটারও এই দুইখান বেশ পছন্দ। গণতন্ত্রের নিয়মে ফেঁসে গিয়ে বেচারি বউ এখানে লাজওয়াব, লাচার। তার সোপ অপেরা ততক্ষণ বন্ধ। তবে মজার কাণ্ড, ‘আদালত’ আর ‘সি.আই.ডি’কে এনে এক এপিসোডে জোড়া লাগিয়ে দেয়া হলো। এই ক্রসওভারের কথা ভাবলে আপনার নিশ্চয়ই গা শিউরে উঠে - কে.ডি বনাম এ.সি.পি! সি.আই.ডি আদালতে! কী ধুন্ধুমার লড়াই! যদি দেখতেন! আহা! একই ভাবে হলিউডও যদি ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ আর ‘এম.আই.বি’কে জোড়া দিয়ে দিত তবে কেমন দেখার মতোই না হতো? ভাবতে পারেন, দাদা?

সাথে সাথেই ভুলটা বুঝতে পেরে আর ভুল না করে পরক্ষণেই বলল, দাদা, বেয়াদবি নেবেন না। আপনার কল্পনাশক্তি যে আমার শক্তির চেয়ে অনেক বেশী তা না বুঝার মতো অবুঝ অন্য যে-ই হোক আমি কিন্তু না। চোখ বুজে একটু কল্পনা করেন তো দাদা। নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন মহাধুন্ধুমার সব একশন। এম.আই.বি’রা বিশেষ কায়দায় দৃষ্টিনন্দন কেতায় ঢুকে পড়ছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের ল্যাবরেটরিতে। স্রষ্টাকে হত্যা করতে উদ্যত অবাধ্য, বিগড়ে যাওয়া মনস্টারের সাথে তাদের সে কী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ! এর হাতে রে-গান তো ওর হাতে সব-ভুলানো’র অষুধঅলা যন্ত্র। আপনি নিশ্চয়ই আরও শুনতে পাচ্ছেন এজেন্টদের চিৎকার, গো গো গো, এবং তাদের অধিনায়কের কণ্ঠে একালের সেরা ডায়ালগ, “কিল দি মনস্টার এন্ড সেইভ ড. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।”

কিন্তু আমার মুখের ভাব দেখে চতুর আব্দুল্লাহর বুঝতে বাকী রইল না যে এ যাত্রা সে ভুল করেছে। আমি তার ছাইপাঁশ কথার আগা-মাথা কোন মানে যে বুঝতে পারি নি এটি বুঝতে পেরে এবং কী জানি কী মনে করে সে বোকার মতো কৈফিয়তের সুরে মরিয়া হয়ে ‘সত্যি’ শব্দটির উপর বেজায় জোর দিয়ে বলল, দাদা! আজ কদিন ধরে আমি সত্যি আফিমের ধারে কাছেও যাইনি। বুঝলাম অনেক দিন ধরেই পকেট খালি যাচ্ছে, ফলে মাথা গুলিয়ে গেছে। তার মুখ থেকে নিস্তার লাভের ব্যবস্থা করতে আমি বই রেখে মানিব্যাগের খোঁজে উঠে দাঁড়ালাম।

[ছবিগুলো ওয়ার্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে গুগল সার্চ করে পাওয়া।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন